বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
দখল চাঁদাবাজী করলে আপনিও আওয়ামীলীগ হয়ে গেলেন ,মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে চাই-ডা. শফিকুর রহমান দেশে দূনীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই সাধারণ জনগণ ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়,এ্যানী চৌধুরী ২৮৯টি আসনে জামায়াতের প্রার্থী চুড়ান্ত,তালিকা প্রকাশ। ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে চ্যাম্পিয়ন তানযীমুল উম্মাহ আলিম মাদ্রাসা। তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হিফজুল হাদিস প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে আজহারুল ইসলামের রায় ঘোষণাত্তর জামায়াত আমীরের জরুরী সংবাদ সম্মেলন এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ কর্তৃক দুই চীনা নাগরিকসহ মানবপাচারকারী চক্রের তিনজন গ্রেপ্তার ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামি টঙ্গীতে গ্রেফতার ইউআইইউ মেরিনার” যুক্তরাষ্ট্রে মেট রোভ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ এর জন্য নির্বাচিত

আজহারুল ইসলামের রায় ঘোষণাত্তর জামায়াত আমীরের জরুরী সংবাদ সম্মেলন

রিপোর্টার নাম ঃ / ১৩৩ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫, ৪:৫২ পূর্বাহ্ন

আজহারুল ইসলামের রায় ঘোষণাত্তর জামায়াত আমীরের জরুরী সংবাদ সম্মেলন
মিজানুর রহমানঃ
ঢাকা (উত্তর), ২৭ মে ২০২৫ : আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শুকরিয়া আদায় করে বলেছেন, দীর্ঘদিন আমরা এমন একটি সুবিচারপূর্ণ রায়ের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। সেই রায় দিয়ে আজ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আরও বেশি কৃতজ্ঞ করেছেন। সেই মহান রবের দরবারে হৃদয়ের গভীর থেকে শুকরিয়া আদায় করছি আলহামদুলিল্লাহ।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অপার মহিমায় দীর্ঘ কারাভোগের পর মুক্তিলাভ করায় আমীরে জামায়াতের আহ্বানে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন তিনি এ কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এড. মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এবং ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল, এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব, সাইফুল আলম খান মিলন, অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোঃ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও লইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি এড. জসিমউদ্দীন সরকার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, শহীদ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র মাসুদ সাঈদী, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন, শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পুত্র আলী আহমাদ মাবরুর, এটিএম আজহারুল ইসলামের পুত্র তাসনিম আজহার সুমন, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার পুত্র হাসান জামিল এবং এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলার আইনজীবীগণসহ প্রমুখ।

সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিগত শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ঙ্কর জুলুমের শিকার হয়েছিল। জুলুম করে আমাদের বুক থেকে এক এক করে ১১ জন শীর্ষ নেতাকে মিথ্যা, সাজানো ও পাতানো মামলায় এবং মিথ্যা সাক্ষী প্রদানের মাধ্যমে কার্যত জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে। যে জায়গায় বসে আজকে আমি কথা বলছি, সেখানে আগে আপনারা দীর্ঘদিন যাদের বসতে দেখেছেন, যাদের মুখের কথা শুনেছেন কার্যত তাদেরই একজন ছাড়া দুনিয়া থেকে সবাইকে নির্মমভাবে বিদায় করে দেয়া হয়েছে। আমি সেই সমস্ত পরম শ্রদ্ধেয় নেতৃবৃন্দ এবং তাদের যে সমস্ত সহকর্মীদেরকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে মহান রবের দরবারে কাতরকণ্ঠে তাদের জন্য আমি শাহাদাতের সর্বোচ্চ দরজা কামনা করছি।

তিনি আরও বলেন, তার পাশাপাশি স্বৈরশাসনের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন, বিডিআর সদস্যরা এবং সাধারণ প্রতিবাদী জনগণ যাদেরকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে বিশেষ করে চব্বিশের বিপ্লবের সময় যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করি তিনি তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। এ সকল শহীদ পরিবারের সকল সদস্যবৃন্দের প্রতি আমাদের সীমাহীন শ্রদ্ধা, ভালোবাস রইল। তাদের জন্যও মহান রবের দরবারে দোয়া করি তিনি যেন এর বদলা দুনিয়া এবং আখিরাতের উত্তম জাযাহ দান করেন এবং শহীদদের সাথে তাদেরকেও যেন পরম জান্নাতের ঠিকানা দান করেন। আমরা যারা তাদের দায়িত্ব নিয়েছি আমাদের সীমাহীন ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে চলার চেষ্টা করছি। আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতি হাত দিয়ে এই জাতি এবং দ্বীনের জন্য আমাদেরকে কবুল করুন।

তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আমাদের রিভিউ আবেদন শুনানির পর রায় ঘোষণা করেছেন। এই রায়ে আমাদের সম্মানিত মজলুম নেতা এবং আমাদের প্রিয় ভাই এটিএম আজহারুল ইসলামকে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জাতির এই সংকট মুহূর্তে আমাদের মাথার তাজ এইসব নেতৃবৃন্দ যদি বেঁচে থাকতেন, তারা তাদের প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা-অভিজ্ঞতা দিয়ে এই জাতিকে পথ দেখাতে পারতেন। ক্যাঙ্গারু কোর্ট এভাবে এক একজন করে তাদেরকে হত্যা করেছে। দুনিয়ার কেউ তাদেরকে আর আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। কিন্তু তাদের স্মৃতি এবং কর্ম ও তাদের অবদান আল্লাহর দ্বীনের জন্য অম্লান থাকবে এবং বারবার ফিরে আসবে।

তিনি বলেন, এই মামলাগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে সীমাহীন জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। কীভাবে মিথ্যার নেয়া আশ্রয় হয়েছিল, সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহা তার লেখা নিজের বইয়ে স্বীকা করেছেন। কিভাবে পরিকল্পনা মাফিক, ঠান্ডা মাথায় এই নেতৃবৃন্দকে খুন করতে হবে তার ছক তৎকালীন বিচার বিভাগ এবং সরকার মিলে তৈরি করেছিলেন। আপনারা দেখেছেন এক একটা রায় হয়েছে, বাস্তবায়ন হয়েছে। যাকে খুন করা হয়েছে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে তিনি তো আল্লাহর দরবারে চলে গেলেন। কিন্তু পাশাপাশি একই সময় পরিবারের সদস্যদের উপর নির্মম কষাঘাত এবং অত্যাচার করা হয়েছে। আমাদের সম্মানিত ভাই আব্দুল কাদের মোল্লাকে যেদিন রাতে জোর করে ফাঁসি কার্যকর করা হলো সেই রাতে তার বাসায় হামলা করা হলো। তার পবিারের সদস্যদেরকে নাজেহাল ও শারীরিক কষ্ট দিয়ে তাদেরকে জেলে ভরে দেয়া হলো। একেকটা পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো।

তিনি বলেন, স্কাইপ কেলেঙ্কারির ঘটনা গোটা বিশ্ববাসীর নিকট নিন্দিত হয়েছে, তিরষ্কৃত হয়েছে। গোটা বিচার প্রক্রিয়ার সময় দু’টি টর্চার সেল গঠন করা হয়েছিলো। একটার নাম দেয়া হয়েছিলো সেইফ হোম, আরেকটার নাম দেয়া হয়েছিলো সেইফ হাউজ। সেইফ হোমে ভিকটিম নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নাজেহাল করা হতো। সেখানে উচ্চ আদালতের ডিরেকশনে সেইফ হোমে রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন তাদের উপর অত্যাচার চালানো হয়েছে। আমরা তখন নিরবে সহ্য করেছি। আমরা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছি। চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে বলেছি।

সেইফ হোমে নির্যাতনের পাশাপাশি সেখান থেকে সেইফ হাউজে এনে রাখা হতো যাত্রাবাড়ির একটা ঠিকানায়। এসব মিডিয়ায় উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠন এই বিচার প্রক্রিয়াকে নিন্দা জানিয়েছে। তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে কিন্তু তারা তা আমলে নেয়নি। কারণ তারা জানতো স্বচ্ছ বিচার হলে খুন করা যাবে না। কারোরই কথা তারা শুনেনি।

তিনি আরও বলেন, আমরা এই দেশকে ভালোবাসি। আমাদের প্রিয় নেতৃবৃন্দরাও এই দেশকে ভালোবাসতেন। ভালোবাসার জায়গা থেকে তারা চেষ্টা করেছেন দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করার। তাদের সবটুকু যোগ্যতা উজার করে দিয়ে তারা বাংলাদেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন। শুধু রাজপথে নয়, সরকারের একটি অংশ হওয়ার পরও তারা সরকারি ব্যবস্থাপনাগুলোকে ভালো করার চেষ্টা করেছেন।

আপনারাই সাক্ষী, দুইজন মন্ত্রী তিনটা মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তার এই বান্দাদেরকে বিশেষ সাহায্য করেছিলেন। তারা সততা এবং দক্ষতার সাথে তারা তাদের দায়িত্ব পুরোটা সময় ধরে পালন করেছিলেন। এক বিরল প্রমাণ বাংলাদেশের জনগণের জন্য তারা রেখে গেছেন। সততার নজিরবিহীন উদাহরণ তারা রেখে গেছেন। আমরা আশাকরি তাদের এই অবদান জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে যুগের পর যুগ, শতাব্দির পর শতাব্দি ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, সম্মানিত ভাইয়েরা আদালতে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে কি হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। আদালত প্রাঙ্গণে যে পরিবারের মানুষকে খুনের অভিযোগে নেতৃবৃন্দের ট্রায়াল চলছে সেই পরিবারের কারো সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। বরং এক ভাই সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন; ইসাবালির ভাই সুখরঞ্জনবালি তাকে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীর গাড়ি থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ অপহরণ করেছে। তাকে অপহরণ করে নির্যাতন করে ভারতের মাটিতে ফেলে রেখেছিল। জেল খেটে দীর্ঘদিন পর তিনি দেশে ফিরে এসেছেন।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শুধু জামায়াতে ইসলামীর সম্পদ ছিলেন না বা তিনি শুধু বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন বিশ্বের বিশ্বাসী মানুষের সম্পদ। তার সাথে কি আচরণ করেছে আপনারা দেখেছেন। তার এই মামলার ব্যাপারে সঠিক কথাটা বলতে সুখরঞ্জনবালি এসেছিলেন। কিন্তু আইনজীবীর গাড়ির দরজা খুলে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশের আদালতে এরকম ঘটনা ঘটেনি।

তিনি বলেন, এপিলেট ডিভিশনে হিয়ারিং এর সময় প্রধান বিচারপতি সরকার পক্ষের কৌসুলীকে বলছেন, যা কিছু বললেন, তাতে মতিউর রহমান নিজামীকে একদিনের জন্য বা এক মিনিটের জন্যও শাস্তি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আশা করেছিলাম, সত্য কথাটা খোলা কোর্টে বলার পরে অন্তত তার কথার মর্যাদা রাখবেন। কিন্তু না ঐ যে আগের চক্রটা বিদেশ থেকে সাপ্লাই দেয়া রায়ের ভিত্তিতে তাকেও শাস্তি দেয়া হলো।

আদালত আমাদের নেতৃবৃন্দের উপর জুলুম করেছে। বহু কায়দা কানুন করে তাদের মুখ থেকে জোর করে যা নয় তা স্বীকার করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি রায় বাস্তবায়নের আগেও ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু না তারা ছিলেন স্থির চিত্ত, তারা ছিলেন ঈমানের বলে বলিয়ান, তারা ছিলেন সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। এজন্যে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়িয়েছেন কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নাই। তারা আমাদের শিখিয়ে গেছেন যে মর্যাদাবান জাতি সত্যের উপর অবিচল থাকলে ফাঁসি কোনো বিষয় নয়। মৃত্যু একবারই হবে অপমানজনক মৃত্যু নয়, মৃত্যুটা হোক বীরের মত। তাদের মৃত্যু ছিল বীরোচিত মৃত্যু। আল্লাহ তাদের নেক খেদমতগুলো কবুল করে বারাকাহ দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিন। আমরা অনুপ্রাণিত হই তাদের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত জাতিকে যা যা দিয়ে গেছেন তার থেকে।

তিনি বলেন, এই মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমারি যে ল আছে তা ফলো করা হয়নি আবার ডোমেস্টিক যে ল আছে তাও ফলো করা হয়নি। আমাদের দেশে যে এভিডেন্স ল আছে এটা মোটেই ফলো করা হয়নি। সেদিন সংবিধান কোনো বিষয় ছিল না, আইন কোনো বিষয় ছিল না। যাদের ইশারায় কোর্ট পরিচালনা করা হতো, তাদের ইচ্ছাই ছিল আইন; সেটা বৈধ হোক কিংবা অবৈধ হোক। এইভাবে তা-ব চালানো হয়েছে আমাদের উপর।

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ মামলার বিষয়ে বৃটেনের উচ্চ আদালত তাদের রায়ে বলেছে এই মামলাগুলো বিচারের নামে প্রহসন; জাস্ট জেনোসাইড অব দ্যা জাস্টিস। বিচারকে গণহত্যা করা হয়েছে। তারা কিলিং অব দ্যা জাস্টিস বলে নাই। কারণ সিঙ্গেল কেস হলে বলত কিলিং কিন্তু এখানে ছিল একাধিক কেস। একারণেই তারা বলেছে ইট ওয়াজ এ জেনোসাইড টু জাস্টিস। ব্রিটিস আদালত এটাকে জেনোসাইড বললেও বাংলাদেশের তৎকালীন কোর্ট তা বলে নাই। তবে বাংলাদেশের কোর্ট আজ সেটাই বলেছে তাদের রায়ের মাধ্যমে। আমরা আমাদের শহীদ নেতৃবৃন্দ সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, সাবেক নায়েবে আমীর শায়খ আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ, সাবেক আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ কামারুজ্জামান ও শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা, সাবেক নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য শহীদ মীর কাসেম আলী (রহ.), সাবেক নায়েবে আমীর সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুস সোবহান (রহ.), সাবেক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুল খালেক ম-ল (রহ.), যাদেরকে খুন করা হয়েছে অন্যায় রায়ের মাধ্যেমে তাদেরকে আরেকবার গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তাদেরকে দুনিয়া থেকে সরানো হয়েছে, কিন্তু আমাদের বুক থেকে সরাতে পারবে না। আমরা তাদেরকে আমাদের কর্মের মাধ্যমে স্মরণ করবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তাদের রেখে যাওয়া আমানত আল্লাহ যেন আমাদের বহন করার তৌফিক দান করেন।

ব্রিটেনের আদালত বলেছে জেনোসাইড টু দ্যা জাস্টিস। আজকে আমাদের আদালত বলেছে আপিল বিভাগ মিসক্যারেজ অব দ্যা জাস্টিস। ন্যায়ভ্রষ্ট রায়, অন্যায় রায়।

শত কষ্ট আমাদের বুকে থাকা সত্ত্বেও আমরা দেশকে ভালোবাসি। আমরা প্রতিশোধ নেইনি আপনারা দেখেছেন কিন্তু আমরা ন্যায়বিচার চাই। এ রায়ের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে এই রায় ছিল ইচ্ছাকৃত; গণহত্যার মাধ্যমে নেতৃত্ব শূন্য করা। একটা দেশ ও দলের নেতৃত্ব শূন্য করার মানেই হচ্ছে জনগণকে অন্ধকারের মাঝে ঠেলে দেয়া।

এ রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সত্য মেঘের আড়াল ভেদ করে আলোর ঝলক নিয়ে আসে, সে সত্যটাই আজ প্রমাণিত হল।

আমরা জাতির কাছে কথা দিচ্ছি মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় প্রিয় দেশবাসীর সমর্থন সহযোগিতায় যদি এই দেশের সেবা করার সুযোগ আমাদের কাছে আসে, তাহলে আমরা ইনশাআল্লাহ প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাব। বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ঘটাব এবং সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করার জন্য প্রিয় জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের সবটুকু উজার করে দিব। পাশাপাশি আমরা চাইব আমাদের সমাজ দুর্নীতিমুক্ত হোক, দুঃশাসনমুক্ত হোক, অপরাধমুক্ত হোক, বৈষম্যমুক্ত হোক, কল্যাণধর্মী সমাজ হোক, মানবিক সমাজ হোক সেই সমাজ গঠনে আমরা আপনাদের সাহচার্য, সমর্থন, সহযোগিতা ও দোয়া আমরা কামনা করি।

তিনি আরও বলেন, হে আল্লাহ তুমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমাদের কবুল করুন। পদ-পদবী ও নেতৃত্বের বাহাদুরির জন্য নয়, প্রিয় মানুষদের জন্য ভাল কিছু করতে চাই। তুমি আমাদের সেই তাওফীক দান করুন। আমরা শত বিপদাপদের মধ্যেও দেশবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এমনকি গণঅভুত্থানের পর আমাদের শহীদ, আহত ও পঙ্গু ভাই বোনদের পাশে থাকার। আমরা বিশ্বাস করি আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে আমাদের পুরো কর্তব্য আদায় করতে পারিনি আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে। এখনো অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আপনারা আমাদের ক্ষমা করবেন আমাদের কোনো আচরণে এবং কোনো কথা ও কাজের মাধ্যমে কষ্ট পেয়ে থাকলে যখন যেভাবে হোক। কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, দল হিসেবেও আমরা দাবি করিনা আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। এ সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী বা সহকর্মীদের দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন, সবার কাছে বিনা শর্তে ক্ষমা চাই। আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।

আল্লাহ এ জাতির সহায় হোন। জাতির অনেকগুলো বার্নিং ইস্যুজ এখনো অমীমাংসিত। রাজনৈতিক সকল দল ও সংশ্লিষ্ট অংশীজন দেশকে ভালবেসে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা যেন সবাই যথাযথ ভূমিকা পালন করি।

আমরা কথা দিচ্ছি মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় প্রিয় দেশবাসীর সমর্থন ও সহযোগিতায় যদি দেশের সেবা করার দায়িত্ব আমাদের উপর আসে আমরা ইনশাআল্লাহ প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাব। বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ঘটাব। সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করার জন্য প্রিয় জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের সবটুকু উজার করে দিয়ে চেষ্টা করব। আমরা চাই আমাদের সমাজ দুর্নীতি মুক্ত হোক, দুঃশাসন মুক্ত হোক, অপরাধ মুক্ত হোক, বৈষম্য মুক্ত হোক, কল্যাণধর্মী সমাজ হোক, মানবিক সমাজ হোক। সেই সমাজ পরিগঠনে আমরা আপনাদের সাহায্য, বন্ধুত্ব, ভালবাসা, সমর্থন, দোয়া কামনা করি। আল্লাহ তাআলা দেশবাসীকে হেফাযত করুন। প্রিয় দেশকে হেফাযত করুন। প্রিয় দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আল্লাহ তাআলা অক্ষুন্ন রাখুন। সবাই মিলে মিশে একটা সোনালি সমাজ যেন বিনির্মাণ করতে পারি আল্লাহ তাআলা এ দেশের মানুষকে সেই সাহায্য দান করুন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By ThemesDealer.Com