প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে চাই-ডা. শফিকুর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ঢাকা, ০৩ জুন ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রবাসীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গণ-অভ্যুত্থানে দেশবাসীর পাশে ছিল। অথচ তাদের এনআইডি নেই, ভোটের অধিকার নেই। এক কোটির অধিক প্রবাসীকে ভোটের ন্যায্য অধিকার দিতে হবে। ইসিকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ এ নির্বাচনের আগেই নিতে হবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বনানীস্থ হোটেল শেরাটনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দল হিসেবে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক সর্বসম্মত রায়ের মাধ্যমে নিবন্ধন ফিরে পাওয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
আমীরে জামায়াত বলেন, ৫৩ বছর আমরা পার করেছি। সময় হিসেবে একটা দেশের জন্য এটা নেহায়েত কম সময় নয়। ভিয়েতনাম এক্ষেত্রে অতি সাম্প্রতিক উদাহরণ, যারা তাদের দেশকে একটা উচ্চতায় নিয়ে গেছে। কেন আমরা দেশটাকে সাজাতে পারলাম না। যেই ক্ষমতায় গেছে, সেই ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছে। যে কারণে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পরই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে, কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে কিন্তু ফ্যাসিজম এখনো এদেশের ঘাড়ে চেপে বসে আছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৯ সাল থেকে ২০২৫ পর্যন্ত আমাদের পথচলা। আমাদের এক থেকে এগারো পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে সকল নেতাকে শহীদ করা হয়েছে। নিবন্ধন ও প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সারাদেশের সমস্ত অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোথাও ক্ষণিকের জন্য দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি।
আয়নাঘরে অসংখ্য মানুষকে গুম করে রাখা হয়েছে। এদেশের আলেম-উলামাদের হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর উপহাস করা হয়েছে। নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হয়েছে, সাংবাদিকরাও রেহাই পান নি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যে শর্তে নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল, তার কোন বিচ্যুতি জামায়াত করে নি। তারপরও নিবন্ধন বাতিল করার জন্য তারা আদালতে যায় এবং আদালতও এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে রায় দেয়। এ দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ে আমাদের বন্ধুদের আমাদের পাশে পেয়েছি। গণমাধ্যমের বন্ধুরাও পাশে ছিল। বিশেষ করে আইনী লড়াইয়ে আইনজীবী প্যানেলের যারা পাশে ছিলেন, তাঁদের প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের দেশে দুর্নীতি ও দু:শাসনের বিরুদ্ধে লড়তে কাজ করে যাচ্ছি। ৫ আগস্টের বিপ্লব না হলে আমরা হয়তোবা এখনো কথা বলতে পারতাম না। সেজন্য শহীদদের শাহাদাত কবুলের জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ ও আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থার দাবী জানাচ্ছি।
নির্বাচন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাবেক আমীরে জামায়াত ও ডাকসু‘র জিএস অধ্যাপক গোলাম আযম কেয়ারটেকার সরকারের ফর্মুলা দিয়েছিলেন। এর ভিত্তিতে ৯১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ফেয়ার ইলেকশন হয়েছিল। এরপরে ৯৬, ২০০১ এবং এমনকি ২০০৮ এর নির্বাচন হয়েছিল। আদালতের মাধ্যমে এ কেয়ারটেকার ব্যবস্থাকে বাতিল করা হয়। সেখানেও রায়ে বলা হয়েছিল দুইটা নির্বাচন এ ব্যবস্থায় হতে পারে, তাও মানা হয়নি।
আওয়ামী আমলের তিনটা নির্বাচনের প্রথমটাতে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল। ২০১৮ তে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সবাই দেখলো মিডনাইট ইলেকশন আর ২০২৪ এ আমরা দেখলাম আমি আর ডামি!
আমাদের সন্তানরা একটা ছোট্ট ন্যায্য দাবী নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলো। শেষ পর্যন্ত বাচ্চাদের এক সাগর রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। বিশ্ব দেখলো সদলবলে সবাই দেশ থেকে পালালো।
নির্বাচনোত্তর সহিংসতা প্রসঙ্গে বলেন, এটা আমরা আর শুনতেই চাই না যে, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় পাহারা দিতে হবে। আমরা পাশ করলে নির্বাচন সুষ্ঠু আর পাশ না করলে নির্বাচন দুষ্ট। এটাও বলা হয়, এক মুহূর্তের জন্য শান্তিতে থাকতে দেবো না।
সবশেষে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, অতি দ্রুত আমরা আমাদের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাবো। একটা ভোজসভার মাধ্যমে আমাদের প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা কোন ফেভারিজম চাই না, ন্যায্য অধিকার চাই। যুব সমাজের প্রতি আমাদের কমিটমেন্ট, আমরা তোমাদেরকে দেশ গড়ায় দেখতে চাই এবং এ ব্যাপারে তোমাদের পাশে আমরা আছি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাড. মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এবং সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাড. মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল, অ্যাড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব, সাইফুল আলম খান মিলন, অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোঃ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও লইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাড. জসিমউদ্দীন সরকার, অ্যাডভোকেট শিশির মনির, ব্যারিস্টার মাহবুবুল আলম সালেহী, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমসহ জ্যেষ্ঠ নাগরিক, সেনা কর্মকর্তা, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।