রাজধানীর চার থানার সীমানা মিলে গঠিত উত্তরা, তুরাগ, রুপনগর ও মিরপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ। এই জনবহুল বিশাল এলাকাটি এখন গাড়ির তেল চুরির হাটে পরিনত হয়েছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার তেল চুরি হচ্ছে। যেন দেখার কেউ নেই। স্হানীয় প্রশাসন একদম নীরব বললেই চলে।
জানা গেছে, এসময় বন্যার কবল থেকে রাজধানীবাসীকে বাঁচাতে তুরাগ নদ শাসনে গড়ে তোলা এ বাঁধ একসময় ছিল ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য। মাঝেমধ্যেই অপরাধীরা এ বাঁধের দুই পাড়ে এবং ঝোপঝাড় জঙ্গলে লাশ ফেলে রেখে যেত। বাঁধের ঢালে ও খালের ওপর ছিল অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিভিন্ন আস্তানাও। আগের চেয়ে এসব অপরাধ কিছুটা কমলেও বর্তমানে এ বাঁধ যেন হয়ে উঠেছে চোরাই তেলের হাট। বাঁধের ওপর ঢাকা থেকে টঙ্গীমুখী সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারি যানবাহনের চুরি করা তেল কেনার বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা।ে চোরাই তেল কারবারিরা দুদিক থেকেই লাভ করে পকেট ভারী করছেন। আর চোরাই এ তেল কারবারিদের কাছ থেকে প্রতি রাতে ব্যারেল ব্যারেল নিয়ে যান সাভার, আশুলিয়া, তুরাগ, উত্তরা, মিরপুর ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা। তারা স্থানীয় খোলাবাজারে এ তেল সরবরাহ করে থাকেন। গত কয়েক দিন ধরে সাভার, আশুলিয়া, রূপনগর ও শাহ আলী থানাধীন বেড়িবাঁধ এলাকা ঘুরে অন্তত ডজনখানেক তেল চুরির অবৈধ স্থাপনা দেখা গেছে। রাস্তার পাশে কোথাও কালো কাপড় দিয়ে আড়াল করে আবার কোথাও টিনের বেড়া দিয়ে চোরাই তেল কেনার স্থাপনা গড়ে তুলেছে স্থানীয় বেশ কয়েকটি চক্র। এসব অবৈধ স্থাপনায় দিনের বেলায় তেমন কোনো গাড়ি চোখে না পড়লেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ভিড় জমে বিভিন্ন যানবাহনের। যার মধ্যে রয়েছে সরকারি- বেসরকারি ডাম্প ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস। এসব যানবাহনের চালক চোরাই তেল কেনার স্থাপনার সামনে গাড়ি থামিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে জ্বালানির ট্যাংক থেকে তেল বের করে বিক্রি করে দেন।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের রূপনগর, শাহ আলী ও তুরাগ থানা পুলিশের সহায়তায় চোরাই তেল কারবারিরা অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বেড়িবাঁধের আশপাশের লোকালয়ের বাসিন্দারা। এছাড়া বাঁধের কিছু অংশ মিরপুরের রুপনগর, শাহআলী, সাভার, আশুলিয়া ও তুরাগ থানার মধ্যে পড়েছে।
সাভারের বিরুলিয়া ব্রিজসংলগ্ন বেড়িবাঁধ থেকে রূপনগর এবং শাহ আলী থানার বেড়িবাঁধ ঘুরে দেখা গেছে, কিছুদূর পরপরই তেল রাখার গ্যালন, ড্রাম, প্লাস্টিকের পাইপ ও বালতি নিয়ে বসে আছেন চোরাই তেল কারবারিরা। বাঁধের ওপরই কোথাও প্লাস্টিকের কাগজ, কোথাও কালো কাপড় আবার কোথাওবা ভাঙা টিনের বেড়া দিয়ে ছোট ছোট টং ঘর বা দোকান তৈরি করা হয়েছে। এসব স্থাপনার সামনে যানবাহন পার্কিংয়ের জায়গা রাখা হয়েছে। বাঁধের সড়ক দিয়ে চলতে চলতেই বিভিন্ন যানবাহনকে সেসব স্থাপনায় ঢুকতে দেখা গেছে।