শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন
ক্রীড়া প্রতিবেদক : ফের বিশ্বকাপ ফুটবল বাছাই শুরু করতে গিয়েও করোনায় আটকে গেছে ফিফা-এএফসি। এশিয়ার দেশগুলোতে কভিড-১৯ পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ দেখে তারা স্থগিত করেছে এশীয় অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাই। অবস্থার উন্নতি হলে বাছাই পর্বের বাকি ম্যাচগুলো হবে আগামী বছর।
সুবাদে করোনায় তালগোল পাকিয়ে ফেলা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। ফেডারেশনের সমন্বয়হীনতা ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ফুটবল ক্যাম্পই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে গিয়েছিল। করোনা পজিটিভ ফুটবলারদের নেগেটিভ ভেবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ক্যাম্পে। কাল ফিফা-এএফসির ওই সিদ্ধান্তের পর সারাহ রিসোর্টের সেই ফুটবল ক্যাম্প বন্ধ করে দিয়েছে বাফুফে।
গত মার্চে করোনায় স্থগিত হওয়া বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব ফের শুরুর উদ্যোগ নিয়েছিল এএফসি। চেয়েছিল আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে বাকি ম্যাচগুলো সেরে ফেলতে। এ জন্য হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে ম্যাচগুলোর তারিখ প্রস্তাব করলেও চূড়ান্ত করেনি। পাশাপাশি এএফসি তৈরি করেছিল করোনা সুরক্ষা নিয়মে মোড়ানো নতুন ‘ম্যাচ প্রটোকল’। অর্থাৎ ম্যাচের প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হবে, স্টেডিয়াম কিভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে, অতিথি দলকে করোনা পরীক্ষা করানো এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা বিষয়ক নানা দিক। দলগুলোকে এত সব নির্দেশনা পাঠিয়েও এএফসি ভয়মুক্ত হতে পারেনি। যেমন—বাংলাদেশ দল ক্যাম্প শুরু করতে গিয়েই নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। দলে সংক্রমণের হিড়িক দেখে স্বাভাবিকভাবে এএফসিও দুশ্চিন্তায় পড়েছিল। ভারতীয় দলে ওরকম কিছু না হলেও তাদের দেশের করোনা পরিস্থিতিও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এই দুই দেশের মতো এশিয়ার বেশি কিছু দেশেও আছে কমবেশি করোনা সংক্রমণ। এমন সংক্রমণপ্রবণ দেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে গিয়ে ‘সেন্ট্রালাইজড ভেন্যু’তে খেলাতেও রাজি হচ্ছে না কেউ। উপায়ান্তর না দেখে ফিফার সঙ্গে আলোচনা করে এএফসি এশীয় অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের খেলা শুরুর উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে। এশিয়ার গ্রুপ ম্যাচগুলোকে নিয়ে গেছে আগামী বছর।
তাতে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ মনে করছেন, ‘করোনাকালে বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় অক্টোবর-নভেম্বরের ম্যাচগুলো পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে ২০২১ সালে। এ কারণে বাফুফের জাতীয় দল কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাদের ফুটবল ক্যাম্পও বন্ধ করা হচ্ছে।’ সারাহ রিসোর্টে ক্যাম্প বন্ধ হলেও বাংলাদেশ ফুটবলের করোনা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ এখনো শেষ হয়নি। বাফুফে সম্পাদক যেমন বলেছেন, ‘গত ১০ আগস্ট আইসিডিডিআরবি ও প্রাভা হেলথ কেয়ারে ক্যাম্পের ৩০ ফুটবলার ও ৬ স্টাফের কভিড-১৯ পরীক্ষার ফল আমরা হাতে পেয়েছি। দুই জায়গার রিপোর্ট অনুযায়ী সাত ফুটবলার করোনা পজিটিভ। তিনজনের ক্ষেত্রে দুই হাসপাতালের দুই রকম রিপোর্ট পেয়েছি, তাই তাদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। আক্রান্ত সাতজনের চিকিৎসার উদ্যোগ নেবে ফেডারেশন।’ অথচ ৫ থেকে ৭ আগস্ট সরকারি হাসপাতালে করানো পরীক্ষায় ৩০ জনের মধ্যে ১৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছিল! সংক্রমণের এই ভয়াবহ ছবিটাই ভয়ার্ত করে তুলেছিল ফুটবলবিশ্বকে।
এর পাঁচ থেকে তিন দিন পর বেসরকারি হাসপাতালে করানো পরীক্ষায় আক্রান্তের সংখ্যাটা নেমে আসে সাতে। আক্রান্ত সাত ফুটবলার হলেন ম্যাথিউস বাবলু, রবিউল হাসান, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, টুটুল হোসেন বাদশা, শহিদুল আলম সোহেল, আনিসুর রহমান জিকো ও বিশ্বনাথ ঘোষ। তাঁদের আপাতত সারাহ রিসোর্টে থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। প্রাভা হেলথ কেয়ার ও আইসিডিডিআরবি থেকে দুই রকম রিপোর্ট এসেছে রিয়াদুল হাসান রাফি, রায়হান হাসান ও রাকিব হোসেনের। তাঁরা পর্যবেক্ষণে থাকবেন এবং নির্দিষ্ট সময় আইসোলেশনে কাটিয়ে আবার করোনা পরীক্ষা করাবেন। সুস্থ থাকা বাকি ২০ ফুটবলার বাড়ি ফিরে যাবেন আজ।