সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৩ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দখলে নিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। গত মঙ্গলবার বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং দুর্নীতির প্রতিবাদে শনিবারও দেশটিতে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। এদিন পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে তাদের। বৈরুতের শহীদ চত্বর এলাকায় গুলির ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া, কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী লেবাননের পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের কার্যালয়ে প্রবেশ করে সেটি দখলে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
ব্যাপক দুর্নীতি বন্ধ এবং রাজনীতিতে সংস্কার চেয়ে কিছুদিন ধরেই লেবাননে বিক্ষোভ চলছিল। বৈরুতের ভয়াবহ বিস্ফোরণ সেই ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। সরকারের গাফিলতির কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে দাবি করে গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজপথে বিক্ষোভ করছেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শনিবার লেবাননে বিক্ষোভে অংশ নেন অন্তত পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষ। এদিন বিস্ফোরণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বৈরুত বন্দরের শহীদ চত্বর থেকে বিশাল মিছিল বের করা হয়।
তবে দিনের শুরুতেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশও টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে তার জবাব দেয়।
এদিন বিক্ষোভের মধ্যে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে দিতে একটি দল লেবানিজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করে। এসময় তারা দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের ছবিতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং মন্ত্রণালয় দখলের ঘোষণা দেয়।
এক বিক্ষোভকারী বিবিসি’কে জানান, প্রায় একশ’ লোক তাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ভবনে প্রবেশ করেছে। তারা ভবনে প্রবেশপথের দখল নিয়েছে।
রেডক্রসের বরাতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এদিন বিক্ষোভের সময় অন্তত ১১০ জন আহত হয়েছেন। বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শহীদ চত্বরে গুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে কারা গুলি চালিয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নয়।
এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন লেবানিজ প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। টেলিভিশনের এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘আগাম সংসদীয় নির্বাচন ছাড়া আমরা দেশের কাঠামোগত সংকট থেকে বের হতে পারব না। বিষয়টি নিয়ে আগামী সোমবার মন্ত্রিসভায় আলোচনা হবে।’ সূত্র: বিবিসি
আল-জাজিরা ও বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভে বলপ্রয়োগ ও কাঁদানেগ্যাস ছোড়া শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় কিছু বিক্ষোভকারী। মঙ্গলবারের ওই বিস্ফোরণ গোটা বৈরুতকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। সরকারের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে ক্ষুব্ধ জনতা।
ব্যাপক দুর্নীতি বন্ধ এবং রাজনীতিতে সংস্কার চেয়ে কিছুদিন ধরেই লেবাননে বিক্ষোভ চলছিল। বৈরুতের ভয়াবহ বিস্ফোরণ সেই ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। সরকারের গাফিলতির কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে দাবি করে গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজপথে বিক্ষোভে নামতে শুরু করে হাজারো মানুষ।
বন্দরের গুদামঘরে ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুতে আগুন ধরে ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিশাল পরিমাণ ভয়ানক দাহ্য পদার্থ ছয় বছরের বেশি শহর কেন্দ্রের এত কাছে কোন নিরাপদ ব্যবস্থা না নিয়ে কীভাবে রাখা হলো তা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে দেশটির জনগণ।
যারা এর জন্য দায়ী তাদের খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু দুর্নীতি, মুদ্রার পতন, অর্থনীতির ধস আর রাজনীতির সংস্কারের দাবিতে গত বছরের অক্টোবর থেকে বিক্ষোভ করে আসা লেবানিজরা সরকারের এমন আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছে না। তাই তারা পথকেই বেছে নিয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া দুই মন্ত্রীকে সেখানে পৌঁছাতে দেয়নি ক্ষুব্ধ মানুষজন। ফারেস হালাবি নামে এক তরুণ বিক্ষোভকারী এএফপিকে বলেন, ‘তিন দিন ধরে চারপাশ পরিষ্কার, ধ্বংসস্তুপ মুছে ফেলা আর আমাদের ক্ষত ঢেকে রাখার পর এখন আমাদের ক্রোধ বিস্ফোরিত হওয়ার এবং তাদের শাস্তি দেওয়ার সময় এসেছে’।
বিশাল একটি বিক্ষোভ বন্দরের নিকটবর্তী অন্যতম বিধ্বস্ত অঞ্চল শহীদ স্কয়ারের সঙ্গে সংযুক্ত করবে, যা গত বছর শুরু হওয়া সরকারবিরোধী বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল। কয়েকজন বিক্ষোভকারী দেশের রাজনৈতিক নেতাদের জন্য শহীদ স্কয়ারে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করেছেন।
সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাদের ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বলছে তারা। সরকারবিরোধী ক্ষোভ জানানো ছাড়াও বিশাল ওই গণজমায়েতে বিস্ফোরণে নিহত অর্ধশতাধিক মানুষকে স্মরণ করা হবে। এ ছাড়াও ৫ হাজারের বেশি আহত ও গৃহহারা হওয়া তিন লাখ মানুষের প্রতি সমবেদনা জানাবে বিক্ষোভকারীরা।