বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ অপরাহ্ন
মিজানুর রহমান সিটি উত্তর ঢাকা ঃ
গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে অপহরণের পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী এবং ৪ দিন পরে বাড়ির পাশে কলাবাগান থেকে সাড়ে ৬ বছরের শিশু তামিমের লাশ উদ্ধার হওয়া চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যা মামলার মূলহোতা ও সহযোগীকে যৌথ অভিযানে ময়মনসিংহ হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১ ও র্যাব-১৪*
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জংঙ্গী, সন্ত্রাসী, খুনী, ছিনতাইকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার মাধ্যমে আইনের হাতে সোপর্দ করে সাধারণ জনগণের মনে বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম তামিম (০৬) কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ আইনুদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতো এবং পিতা মোঃ নাজমুল হোসেন (৩০) এর এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ভিকটিম তাদের পরিবারের বড় সন্তান ছিল। ভিকটিমের পিতা তার পরিবার নিয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ এলাকায় বসবাস করতেন এবং প্লাস্টিকের ববিন কাটার ব্যবসা করতেন। প্রতিদিনের ন্যায় গত ০৭ জুলাই ২০২৪ তারিখ সন্ধ্যায় আনুমানিক ০৬০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম তামিম (০৬) বাসায় ফিরে না আসায়, ভিকটিমের পরিবারের লোকজন আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে কোনাবাড়ী থানায় ০১ টি নিখোঁজ জিডি করেন (জিডি নং-৩৩২ তারিখ-০৭ জুলাই ২০২৪)। পরবর্তীতে গত ০৮ জুলাই ২০২৪ তারিখ সকালে ভিকটিমের পিতার মোবাইলে অজ্ঞাতনামা একজন ফোন করে জানায় যে, ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম তামিম (০৬) তাদের হেফাজতে আছে এবং তাদেরকে ১০ (দশ) লক্ষ টাকা নগদ প্রদান করলে তারা ভিকটিমকে ছেড়ে দিবে। ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজন অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীদেরকে টাকা দেওয়ার জন্য ময়মনসিংহ বাইপাস এলাকায় গেলেও অপহরণকারীরা তাদের সাথে দেখা করে না। এ অবস্থায় গত ১০ জুলাই ২০২৪ তারিখ দুপুর আনুমানিক ১২২০ ঘটিকার সময় কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ মধ্যপাড়া এলাকায় কলাবাগানের ভিতর একটি শিশুর পঁচা গন্ধযুক্ত মৃতদেহ পড়ে আছে দেখে আশেপাশের লোকজন থানায় খবর দেয় এবং ঘটনাস্থলে ভিকটিমের পিতা ও কোনাবাড়ী থানা পুলিশ ভিকটিমের মৃতদেহ সনাক্ত করে। পরবর্তীতে, ভিকটিমের পিতা মোঃ নাজমুল হোসেন (৩০) বাদী হয়ে গাজীপুর কোনাবাড়ী থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন- যা মামলা নং-৭, তারিখ ১০ জুলাই ২০২৪ ইং ধারা-২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী/২০০৩) এর ৭/৮/৩০ তৎসহ ৩০২/২১ পেনাল কোড।
উক্ত নৃশংস হত্যাকান্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক্স মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। এই ক্লুলেস হত্যাকান্ডের প্রকৃত ঘটনা রহস্য উদঘাটনের জন্য র্যাব-১ ও র্যাব-১৪ এর আভিযানিক দল ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং আসামী গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ জুলাই ২০২৪ তারিখ দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত র্যাব-১ ও র্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানাধীন কদুরবাড়ী বাজার এলাকা হতে হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী ১) মোঃ হাসান মিয়া (২০), পিতা-মৃত মজনু মিয়া, সাং-পাউরিতলা, থানা-মুক্তাগাছা, জেলা- ময়মনসিংহ এবং তার দেয়া তথ্যমতে ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানাধীন কুশকান্দা এলাকা হতে উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ভিকটিমের চাচাতো ভাই ২) মোঃ সাগর মিয়া (২২), পিতা-ইস্কান্দার মিয়া, সাং-কুশকান্দা, থানা- ফুলপুর ও জেলা-ময়মনসিংহ‘দেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীদ্বয় ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম তামিম (০৬)’কে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং এই চাঞ্চল্যকর হত্যার লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেয়। আসামী দুইজন ভিকটিমের পিতা মোঃ নাজমুল হোসেন (৩০) এর প্লাস্টিকের ববিন কাটার গোডাউনে চাকুরী করতো। তারা ঋণগ্রস্থ ছিল বিধায় মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ভিকটিমকে অপহরণের পরিকল্পনা করে।
সেই পরিকল্পনার জের ধরে গত ০৭ জুলাই ২০২৪ তারিখ বিকাল আনুমানিক ১৭৫০ ঘটিকার সময় ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম তামিম (০৬)’কে তারই পিতার প্লাষ্টিকের ববিন কাটার গোডাউনের সামনে থেকে ফুসলিয়ে হাতি দেখানোর কথা বলে আসামীদের ভাড়াকৃত বাসায় নিয়ে যায়। ভিকটিমকে বাথরুমের ভিতর দড়ি দিয়ে হাত ও পা বেধে মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে আটক করে রাখে এবং মুক্তিপণের বিষয় নিয়ে উভয় আসামীদ্বয়ের মধ্যে সলাপরামর্শ হয়। একপর্যায়ে ভিকটিম আসামীদ্বয়ের পূর্ব পরিচিত হওয়ায় মুক্তিপণ পেলেও ভিকটিম তার পিতাকে উক্ত ঘটনা জানিয়ে দেয়ার ভয় থেকেই একই তারিখ রাত আনুমানিক ২০০৫ ঘটিকার সময় বাথরুমের ভিতর আসামী ভিকটিমের চাচাতো ভাই মোঃ সাগর মিয়া (২২) ভিকটিমের পা চেপে ধরে এবং অপর আসামী মোঃ হাসান মিয়া (২০) ভিকটিমের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে। তারপর কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ মধ্যপাড়া এলাকায় একটি কলাবাগানের ভিতরে অত্যন্ত সু-কৌশলে গত ০৭ জুলাই ২০২৪ তারিখ আনুমানিক ২২৫৫ ঘটিকায় রাতের আধারে লাশ গুম করে এবং গত ০৮ জুলাই ২০২৪ তারিখ ভিকটিমের পিতার কাছে আসামী মোঃ হাসান মিয়া (২০) ফোন করে জানায় ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম তামিম (০৬) তাদের হেফাজতে আছে। তাদেরকে ১০ লাখ টাকা নগদ প্রদান করলে তারা ভিকটিমের পিতার কাছে ভিকটিমকে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরবর্তীতে ভিকটিমের লোকজন টাকা দেওয়ার জন্য পুলিশের সহায়তায় ০৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে আসামীদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী ময়মনসিংহ বাইপাস এলাকায় যায়। কিন্ত আসামীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের সাথে সাক্ষাৎ না করে সুকৌশলে পালিয়ে যায় বলে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জিএমপি গাজীপুর কোনাবাড়ী থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।