বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক : শখ করে ফিঞ্চ পাখি পালন করেন দিনার। সে পাখিতেই তিনি অর্জন করেছেন প্রচুর সফলতা। কিছুদিন আগে তার খাঁচা আলো করে এসেছে ওয়েস্টার্ন বস্নু বিল (ডবংঃবৎহ ইষঁব ইরষষবফ) ফিঞ্চ। বিশ্বে হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন এই পাখি খাঁচায় ব্রিড করতে পেরেছে। এই কয়েকজনার তালিকায় নাম উঠেছে মানিকগঞ্জের আবদুল হান্নান দিনারেরও। মানিকগঞ্জ শহরে গালর্স স্কুল রোডে তার পক্ষিশালা ঘুরে এসে লিখেছেন-মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।
দিনারের বাবা আব্দুর রউফ কবুতর পালন করতেন। ছোট্ট দিনার তা অপলক দৃষ্টিতে দেখতেন। ছোটবেলা থেকেই পাখি তার খুব পছন্দ। বাবার কাছে পাখির জন্য আবদার করতেন। দিনারের বাবা বাজরিগার, লাভবার্ড, ককাটেইল কিনে দিলেন। দিনার বললেন, তখন আসলে পাখির যত্নের বিষয়টা ভালো বুঝতাম না। কিছুদিন পর পাখি মারা যেত। একটু বড় হওয়ার পর দিনারের পাখির প্রতি ঝোঁক আরো বাড়ল। ফিঞ্চ পাখির প্রেমে পড়লেন তিনি। কিনে আনলেন নানা প্রজাতির ফিঞ্চ। খাঁচার পোষা পাখি ফিঞ্চ নিয়েই পড়ে থাকলেন দিনের পর দিন। বাবাকে বুঝিয়ে বাসার নিচতলায় একটি অংশ নিয়ে নিলেন। গড়ে তুললেন বৈচিত্র্যময় পক্ষিশালা। সে সময়টা ছিল ২০১২ সাল। ২০১২ থেকে ২০১৯, এই সাত বছরে ফিঞ্চ পাখিতে দিনার উলেস্নখযোগ্য পরিমাণ সফলতার মুখ দেখেছেন। দুলর্ভ প্রজাতির বিভিন ফিঞ্চ খাঁচায় ব্রিড করাতে সফল হয়েছেন তিনি। ফলে দেশ তো বটেই। বিদেশিরাও তার পাখির কোয়ালিটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বিদেশের বিখ্যাত ব্রিডাররা যেমন পরিবেশে পাখি পালন করেন। দিনারের পাখিও সে রকমই পরিবেশে বড় হয়। দেশ-বিদেশের সামাজিক মাধ্যমে তিনি আলোচিত ফিঞ্চ ব্রিডার।
ওয়েস্টার্ন বস্নু বিল ছোট মনকেড়ে নেওয়ার মতো একটি পাখি। এই পাখি খাঁচায় ব্রিড করানো (ডিম ও বাচ্চা) দুসাধ্য কাজ। অনেকেই অনেকবার চেষ্টা করে বিফল হয়েছেন। দিনার সম্প্রতি এ কাজে সফল হয়েছেন। তার ঘর আলো করে ওয়েস্টার্ন বস্নু বিল দুটি বাচ্চা দিয়েছে। এশিয়া মহাদেশে তার আগে কেউ এই পাখির বাচ্চা করতে সফল হয়নি। যতদূর জানা যায়, গোটা পৃথিবীতে হাতেগোনা দু’একজন মানুষ সফল হয়েছেন। আমদানিকারকের কাছ থেকে পাখি নেয়ার আট মাস পরে তিনি ব্রিডিং করাতে সফল হন। এ ছাড়া ডাইবসকিস টুইনস্পট, পার্পেল গ্র্যানাডিয়ার, ল্যাভেন্ডার, ব্রোঞ্জ ম্যানিকিন, বস্নু বিল ফায়ার ফিঞ্চ, বস্নাক ফেস বস্নাক ব্রেস্ট ডমিনেন্ট সিলভার জেব্রা, ক্রেস্টেড গ্রিজেল জেব্রা ফিঞ্চ ইত্যাদি বিরল পাখির ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করতে সফল হন। অরেঞ্জ চিকড ওয়াক্সবিল, বস্নু ক্যাপড কর্ডন, থ্রি বি জেব্রা ফিঞ্চ, ক্রেস্টেড পার্ল বেংগলিজ, লুটিনো স্টার ফিঞ্চ, ক্রেস্টেড সেল্ফ চকেলেট বেংগলিজ বাংলাদেশে প্রথম ব্রিড করে সফল তিনি।
বর্তমানে তার সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ৩০ প্রজাতির ফিঞ্চ, যেগুলো সংখ্যায় শতাধিক। অস্ট্রেলিয়ান, আফ্রিকান সব জায়গার ফিঞ্চ রয়েছে তার কাছে। এদের মধ্যে রয়েছে করডোন বস্নু, পার্পল গ্রেনাডিয়ার, ওয়াক্সবিল, প্যারাডাইজ ওয়াইদাহ, মাস্কেড গ্রাস ফিঞ্চ, বিভিন্ন মিউটেশনের জেব্রা, গোল্ডিয়ান, আউল, স্টার, প্যারোট, ক্যানারি, বেঙ্গলি ফিঞ্চ ইত্যাদি। এসব পাখি কলোনি আকারে এবং খাঁচায় পালন করেন তিনি।
আফ্রিকান পাখি ওয়াক্সবিল। সবার ধারণা ছিল এই পাখি বাংলাদেশে কেউ ডিম বাচ্চা করাতে পারবে না। দিনারের বন্ধু জাকির। তিনিও পাখি পালতেন। দিনার জানালেন, জাকিরের উৎসাহে তিনি ওয়াক্সবিল কলোনি করেন। মজার বিষয় হলো ছয় মাসের মধ্যে কলোনিতে ওয়াক্সবিলের বেবী হয়।
দিনারের মতে, পাখি খারাপ নেশা থেকে মানুষ কে বাঁচায়। তিনি বললেন, ফিঞ্চ পাখি অল্প জায়গায় লালন পালন করা যায়। পাখির পেছনে সময় ব্যয় ছেলেমেয়েদের খারাপ নেশা থেকে দূরে রাখতে পারে। দিনার জানালেন, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি তার কাছে রয়েছে। বিভিন্ন রকম দাম। তার কাছে থাকা পাখির এক জোড়ার দাম ৮০০ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রাকৃতিক ফিঞ্চ ৩-৪ বছর বাঁচলেও খাঁচায় পর্যাপ্ত যত্ন নিলে এদের ৭ থেকে ১০ বছর পযন্ত বাঁচানো সম্ভব। পাখির খাবার, খাঁচা সবই সহজলভ্য। দিনারের কাছ থেকে আরো জানা গেল, অনেক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনার পাশপাশি ফিঞ্চ পালন করে হাত খরচের টাকা জোগাড় করছেন।
দিনারের কিছু টেম গোল্ডিয়ান ফিঞ্চ আছে। টেম বলতে বুঝায় পোষ মানানো। গোল্ডিয়ানগুলো যেন তার খুব কাছের বন্ধু। ছেড়ে রাখলেও কোথাও যায় না। তার কাঁধে, হাতে উড়ে এসে বসে। আরাম করে খাবার খায়। আবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে চুপচাপ বসে থাকে। ফিঞ্চ সোসাইটি অব বাংলাদেশ- নামে একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে। এই গ্রম্নপের এডমিন আবদুল হান্নান দিনার। ফেসবুকে এই গ্রম্নপটির সদস্য সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দিনার বললেন, নতুন পাখি পালকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এখানে দেয়া হয়। যে কেউ পোস্ট দিয়ে সাহায্য চাইলে অভিজ্ঞ এডমিন, মডারেটররা সাহায্য করেন।